বন্ধুত্বের পুনর্মিলন: স্মৃতিময় এক সন্ধ্যা

শেখ জাহিদ হাসান
১ নভেম্বর ২০২৫, ১:৪২ অপরাহ্ণ

গোলাপগঞ্জে এসএসসি ২০১৩ ব্যাচের মিলনমেলা সময় বয়ে যায়, বছর পেরিয়ে যায়, কিন্তু শৈশব-কৈশোরের বন্ধুত্বের বাঁধন কখনো মুছে যায় না। সেই অকৃত্রিম সম্পর্কের উষ্ণতাই যেন আবার নতুন করে ফিরে এলো গোলাপগঞ্জের ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় এসএসসি ২০১৩ ব্যাচের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে।

এই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আজ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছেন, নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন। তবু হৃদয়ের গভীরে রয়ে গেছে সেই স্কুল জীবনের নির্ভার দিনগুলো, টিফিন টাইমের আড্ডা, ছোট্ট মসজিদে নামাজ, আর স্কুলপাড়ার ঈদগাহের গল্পে ভরা দুপুরগুলো।

উত্তরে ছিল সেই ছোট পুকুরঘাট-যেখানে বসে কত হাসাহাসি, গল্প, মজার স্মৃতি জমে আছে আজও। জানুয়ারি থেকে মার্চ-এই তিন মাস যেন ছিল খেলাধুলার মৌসুম। স্কুলের পক্ষ থেকে নিয়মিত আয়োজন হতো নানা খেলাধুলার। আবার মাঝেমধ্যে বালুচর বাজারের পাশের এক নাম্বার মডেল স্কুল মাঠে ফুটবল খেলতে যেত বন্ধুরা একসাথে।

কেউ প্রেমে ব্যস্ত, কেউ খেলায়-সব মিলিয়ে ছিল এক রঙিন কৈশোর। আজও মনে পড়ে সেই দিনগুলো। আহা! কী মধুর, কী সোনালি সময় ছিল তা! এমন দিন আর ফিরে আসে না।তবুও স্মৃতিতে তারা চিরজীবী।

দীর্ঘদিন পর সেই চেনা মুখগুলো আবার একত্র হলো গোলাপগঞ্জ নিকা কনভেনশন হলে। সন্ধ্যার নরম আলোয় মুখর হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ। হাসি, উচ্ছ্বাস আর স্মৃতির গন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ।

এই সুন্দর আয়োজনের উদ্যোক্তা ছিলেন প্রিয় দুই বন্ধু সাকিল চৌধুরী ও বদরুল ইসলাম। তাদের নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও পরিশ্রমে পুনর্মিলনীটি হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত ও সফল। উপস্থিত সবার মুখে ছিল আনন্দের হাসি, মনে ছিল অদ্ভুত প্রশান্তি। যেন সময় ফিরে গেছে স্কুল জীবনের সেই নির্ভার দিনে।

খাওয়া-দাওয়া ছিল মন ভরে-সুস্বাদু খাবারের সাথে গল্প, হাসি আর স্মৃতির বন্যা। কেউ পুরনো দুষ্টুমির গল্প শোনাচ্ছে, কেউ প্রিয় শিক্ষকদের কথা মনে করছে, কেউবা শুধু চুপ করে তাকিয়ে আছে পরিচিত মুখগুলোর দিকে-যাদের দেখা মেলেনি বহু বছর।

সবচেয়ে আনন্দের বিষয় ছিল, যারা বর্তমানে প্রবাসে আছেন বা ব্যস্ততার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি, তারাও অনলাইনে যুক্ত হয়েছিলেন অনুষ্ঠানটির সঙ্গে। আমি ঢাকায় থাকায় সরাসরি যেতে পারিনি, তবে পর্দার ওপারে সবার হাসিমুখ দেখেই যেন মন ভরে গেছে। প্রযুক্তি দূরত্ব মুছে দিয়েছে, একে অপরকে কাছে টেনে এনেছে।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সবার একটাই প্রার্থনা। এই বন্ধন যেন সারাজীবন অটুট থাকে, বন্ধুত্বের এই ভালোবাসা যেন সময়ের প্রবাহেও কখনো না ম্লান হয়।

গোলাপগঞ্জের সেই এক সন্ধ্যা তাই শুধু একটি পুনর্মিলনী নয়। এটি ছিল স্মৃতির পুনর্জাগরণ, ভালোবাসার পুনর্মিলন,
আর বন্ধুত্বের অনন্ত উদযাপন।

লেখকঃ শিক্ষার্থী এসএসসি ২০১৩ ব্যাচ


এই বিভাগের আরো খবর