শেখ হাসিনা ভারতে বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে ভারত সরকারকে তার দায় নিতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ভারত সরকারকে আমরা এর আগেও বলেছি। আবারও বলছি তারা শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। এটা নিয়ে তাদের একটি ব্যাখ্যাও আছে। আমরা আইনী ও কূটনৈতিক জায়গা থেকে ফেরত চাচ্ছি এবং চাইবো। কিন্তু শেখ হাসিনা সেখানে থেকে যদি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করে এর দায় ভারত সরকারকে নিতে হবে। সে যদি ভারতে থেকে বক্তব্য প্রচার করে, রাজনৈতিক মিটিং করে তাহলে ভারত সরকারের কাছে এর জবাবহিদিতা চাইবো।
বুধবার জুলাই অভ্যুত্থান কেন্দ্র করে ২৫টি শীর্ষ জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ডকুমেন্টস আকারে প্রকাশিত ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
কোন আতঙ্ক বা ভয় দেখিয়ে ছাত্র-জনতাকে পেছনে ফেরানো যাবে না বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে নাহিদ ইসলাম বলেন, এখানে নানা ধরনের ফাটল ও আতঙ্ক-ভয় ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। যে কোন সময়ের জন্য আমরা প্রস্তুত। আমরা মাঠে আছি। ফেব্রুয়ারি-মার্চ ছাত্র জনতা মাঠে থাকবে। রাজপথ আমাদের দখলেই থাকবে। আমাদের প্রতিরোধ জারি রাখছি।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলেন, ওই সময়টায় সংবাদপত্রের ভূমিকা অনকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ইলেকট্রনিক মিডিয়া সরকারের নিয়ন্ত্রণ পর্যায়ে ছিলো। ওই সময় সংবাদপত্রের একটা ইতিবাচক ভূমিকা ছিলো। অন্তত তথ্যগুলো আমরা জানতে পেরেছি। আবার নেতিবাচক উদাহরণও কিন্তু ছিলো। আন্দোলনকে সংঘর্ষ হিসেবে আখ্যায়িত করাসহ কিছু কিছু সংবাদপত্রের ন্যারেটিভও আমরা দেখেছি। পত্রিকাগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। ওই সময় একেকটা শিরোনাম আমাদের মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে আসতেছিল। ডিজিএফআই আমাদের বিরুদ্ধে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করিয়েছে। কোন কোন সম্পাদক এখন সেটা স্বীকারও করছেন। আমরা এখন দেখছি অনেক মিডিয়া সেই সময়কার অনেক রিপোর্ট সরিয়ে ফেলেছে। তারা নতুন চেহারা নিয়ে আসছে। তবে, আমি মনে করি নৈতিক জায়গাগুলো থেকে এই বিষয়গুলো আলোচনা হওয়া উচিত। মিডিয়ার পজিশন কী ছিলো সেটা নিজেই বলুক। না হলে গণমাধ্যমের প্রতি জনগনের যে অনাস্থা সেটা কমবে না। নানা ধরনের যে ক্ষুব্ধতা তৈরি হয়েছে সেটা থেকেই যাবে। মিডিয়াগুলোতে তখন ব্যবহার করা হয়েছে।
এখনো মিডিয়াগুলোকে করপোরেট হাউজগুলো ব্যবহার করছে দাবি করে তিনি বলেন, অলিগার্কদের মিডিয়ার ওপর বড় প্রভাব। তারা অনেকভাবে আমাদের সাথে এনগেইজ হতে চেয়েছে আমরা সমর্থন দেইনি। তারা এখন আমাদের চরিত্র হনন করার জন্য সেই মিডিয়াগুলোতে ব্যবহার করছে। তারা সরকারের অযৌক্তিক সমালোচনা করছে। তবে আমরা জনগনের সামনে পরিষ্কার থাকতে চাই। জনগন সত্যতা বিচার করবে।
জুলাই আন্দোলনকে এখন ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে মন্তব্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সেই সময় আন্দোলন একরকম ছিলো। এখন আন্দোলনের ন্যারেটিভ যেভাবে প্রতিষ্ঠ হচ্ছে- এখান আমাদের দুর্বলতা আমরা যারা আন্দোলন করেছি তারাও নানা ন্যারেটিভে বিভক্ত হচ্ছি। আমরা এখানে নিজেরা শক্ত ন্যারেটিভ তৈরি করতে না পারলে শত্রুপক্ষের ন্যারেটিভ প্রভাব বিস্তার করবে।
তিনি বলেন, যে ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, বৈদেশিক শক্তির সহায়তায় যেভাবে তারা প্রচার করছে- এখানে সেনাঅভ্যুত্থান হয়েছে। ইসলামিস্ট অভ্যুত্থান হয়েছে। এর বিপরীতে মধ্যে আমরা নিজেরা ছোটখাট ডিবেটে ব্যস্ত। সবাইকে বলবো এসব বিতর্কে না গিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে জুলাই আন্দোলনকে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির আলোকে ব্যাখ্যা করা উচিত।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ বইটিতে জুলাই অভ্যুত্থান ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্বলিত প্রথম পৃষ্ঠা তুলে ধরা হয়েছে। বইটি পড়লে অভ্যুত্থানে কোন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা ইতিবাচক বা নেতিবাচক ছিল সেটা জানা যাবে।
বইয়ের লেখক এবং প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব আহম্মদ ফয়েজ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যখন পাখির মতো মানুষ হত্যা করা হচ্ছিলো তখন আমি দেখছিলাম গণমাধ্যমের ভূমিকা কি। তখন সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা দেখে ভেবেছিলাম এটা আমাদের কাজ হতে পারে না। সেই তাগিদ থেকেই আমি গণমাধ্যমের ভূমিকাকে প্রকাশ করতে বই আকারে ছাপানোর চিন্তা করি। ভবিষ্যতে ইতিহাস আড়াল করতে যেন কেউ না পারে সেজন্য আমি এই কাজটা করি। ভবিষ্যতে ইতিহাস লেখা হলে অনেক সংবাদমাধ্যমকে মুখ লুকাতে হবে। আশা করি পাঠক অভ্যুত্থান কেন্দ্রিক গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে সত্য ইতিহাস জানতে পারবে। এ সময় তিনি ‘সংবাদপত্রে জুলাই অভ্যুত্থান’ শীর্ষক বই প্রকাশের জন্য আহম্মদ ফয়েজ এবং আদর্শ প্রকাশনীকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ৫ আগস্টের পূর্বে অনেক সাংবাদিক, পত্রিকার সম্পাদকরা সরকারের চাটুকারিতা করেছে ফলে সেসময় তারা সংবাদপত্রে তথ্য ছাপায়নি। অনেকে কম লিখেছে, কেউ প্রথম পাতায় লেখেনি আবার কেউ তথ্য গোপন করে সরকারের পক্ষে লিখেছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, কবি এবং সাংবাদিক সালাউদ্দিন শুভ্র ও আদর্শ প্রকাশনার প্রধান নির্বাহী মাহবুব রাহমান বক্তব্য রাখেন।